আমরা ছোট বেলা থেকেই ধনী হওয়ার স্বপ্ন তথা গাড়ি, বাড়ি, নারী থাকবে এই সব চিন্তা করেই বড় হই। কিন্তু বড় হওয়ার আগেই আমাদের কিছু কাজ আরেকজনের কাছে ছোট করে ফেলে।তাই আমরা এখনো যে যেখানে আছি সেখান থেকেই আমাদেরকে শোধরাতে হবে।


ধনী যদি হতে চান তাহলে এই কাজগুলো করা থেকে দূরে থাকতে হবে-

➽ জন্মদিনের পার্টি, ম্যারিজ পার্টি, বিবাহ উদযাপনের জন্য নিজের গচ্ছিত টাকা খরচ না করা। ধনী হওয়ার পর করতে পারেন। ধনী হওয়ার আগে এত জমকালো ভাবে না করাই ভাল। সোশ্যাল দুনিয়ায় সস্তা ছেলিব্রেটি হওয়ার জন্য ধনী কিছু বন্ধুদের দেখানোর জন্য এসব না করাই ভাল।এতে করে দিন দিন গরীব হয়ে যাবেন।দিনশেষে যাদেরকে এত কষ্টের গচ্ছিত টাকা খরচ করে এবং কি কখনো কখনো ঋণ করে খাওয়ালেন তারাই দিনশেষে বলবে আরেকটু ভাল মানের রেস্তুরেনট এ খাওয়াতে পারত।

If you want to be rich please don't do any event before grow rich.

➽   বাড়ি কেনা- মানে কি বাড়ি কিনলে আবার কিভাবে মানুষ গরীব হয় ? কারন আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ চিন্তা করে তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর বাড়ি দরকার। তাই তারা তাদের সন্তানকে বাড়ি কিনে দেয়। বাড়ি কিনে দেয় ঠিকি কিন্তু আসল শিক্ষা দেয় না। হয়তবা ভাল ব্যবহার শিখে না। পরবর্তীতে তার বাবার করে দেয়া বাড়ি বিক্রি করে দেয়। তাই বাড়ি কেনা বাদ দিয়ে আমাদের সন্তানদের শিক্ষা দিতে হবে। তারা যদি শিক্ষিত হয় তারাই বাড়ি করতে পারবে। আপনাকে আমেরিকা, ইতালি ঘুরাতে পারবে কিভাবে আপনাদের ছেলে মেয়ে যদি অক্সফোর্ড এ পরে তাহলে সে আপনাকে তার কনভোকেশনে ইংল্যান্ড, আমেরিকা নিয়ে যেতে পারবে।

If you want to be rich please provide proper education to your children.

➽ গাড়ি কেনা- গাড়ি কেনাও হচ্ছে গরীব হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারন। কিভাবে আসেন আলোচনা করি। ধরেন আমার মাসিক বেতন ৪০ হাজার টাকা।আমি এখন ধরেন বাসে যাতায়াত করতে পারি। কিন্তু যদি অফিসের কলিকের সাথে তাল মেলানোর জন্য  বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করে নিয়ে এসে বিলাসবহুল জীবন যাপনের জন্য গাড়ি কিনি তাহলে আমি দিন দিন গরীব হয়ে যাব। কারন গাড়ির জন্য প্রতি মাসে আমাকে ঋণী হয়ে যেতে হবে।অনেকে তো আবার তার স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে বাইক কিনে দেয়। যে ছেলেকে স্কুলে যাওার জন্য বাবা বাইক কিনে দেয় সেই ছেলেগুলো কেমন মানুষ হয় আমার জানা নাই। শুধু দেখি ক্লাস বাদ দিয়ে বাইকের পিছনে তার কোন বান্ধবীকে নিয়ে হাতিরঝিলে আড্ডা দেয়।আমরা যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ গিয়ে খোজ নিয়ে দেখি দেখব বেশির ভাগ ছাত্ররাই এসব আরাম আয়েশ করে নাই কারন তারা পরে করবে সারাজীবন। তারা চিন্তা করে Grow through not go through.

➽খাবার - ইদানিইং তো খাওয়া দাওয়াটাই একটা হালের ফ্যাশন হয়ে গেছে। বন্ধু বান্ধব,পরিবার পরিজন নিয়ে ভাল কোন রেস্টুরেন্ট এ না খেলে কি আর বন্ধু মহলে স্ট্যাটাস থাকে। আসলে খাবার টা মুখ্য বিষয় না এখানে রেস্টুরেন্ট এর পরিবেশ টাই মুখ্য। সেলফি নেয়া টাই বিষয়। এখানে বলে রাখা ভাল অনেকে আবার ফুড ব্যাংকের রিভিউ দেইখা দেইখা রেস্টুরেন্টে যায়। নিজের কষ্টের গচ্ছিত টাকা অন্যকে দেখানোর জন্য নিমিষেই খরচ করা। যেখানে কোন নরমাল হোটেল এ খেয়ে নিলেই হত। আর ফিটনেস সেটা তো দিন দিন মৃত্যুর কাছে নিয়ে যাচ্ছে। তাই আপনি বেশি খাওয়ার জন্য আর্থিক ও শারীরিকভাবে গরীব হয়ে যাচ্ছেন।

 Panta is better than Fast food.

➽ পোশাক- ইদানিং একটা জিনিশ দেখলাম যারা ইন্সতাগ্রাম ব্যবহার করেন তারা হয়তো বা দেখেছেন যে ছবি টা আপলোড দিলো ওইটার উপর ক্লিক করলে দেখা যায় সে কোন ব্রান্ড এর জামা কাপড় পরেছে। এখন ধরেন রনবির কাপুর জারা ব্রান্ড এর কাপড় পরেছে তাহলে আমাকেও অই ব্রান্ডের কাপড় পরতে হবে। কিন্তু আমরা একবারের জন্য ও চিন্তা করি না যে আমার মাসিক আয় কি তার আয়ের সমান কিনা। তার কাপর টা কি জন্য প্রয়োজন আমার কি আদ প্রয়োজন কিনা। সে কি এখন ধনী না আমার মত ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। পোশাক কিনে কিনে আমরা গরীব হয়ে যাচ্ছি।

➽মানুষকে খুশি করা - আমরা আমাদের চার পাশের মানুষদের খুশি করার জন্য,নিজেকে তার কাছে জাহির করার জন্য বড় সাজা এবং নিজের আর্থিক ক্ষতি করা। কারন ধরেন আপনার কিছু কথিত ভক্ত দের কাছে আপনি নিজেকে বড় করার জন্য খাতির জন্য অনেক বড় করেছেন। একদিন দুইদিন খাওইছেন এখন থেকে জখনি তাদের সাথে দেখা হবে তাদের সামনে বারাবরের মত নিজের মিথ্যা সন্মান কমে জাওার ভয়েই আপনাকে আর্থিক খতির মুখোমুখি হতে হবে।

এইটাকেই বলে খ্যাতির বিড়ম্বনার শিকার হওয়া।  

➽ আরেক জনের সুখে নিজে দুঃখ পাওয়া- আমরা খুব্ স্বাভাবিকভাবেই অনের সুখে নিজে খুব বেশি দুঃখ পাই। কেউ একজনের বউ সুন্ধর আমি কষ্ট পাই, কেউ একজন গাড়ি কিনসে আমি কষ্ট পাই,কেউ একজন দামি ঘড়ি পরে আমি কষ্ট পাই। এখান থেকে আমাদেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের চিন্তা করতে হবে তাদের আজকের সুখের জন্য হয়তো আগে যে শ্রম দিয়েছে আমি দেই নাই। সে তখন শ্রম দিয়েছে তাই পেয়েছে। আমি আগে দেই নাই তাই এখন পাই নাই। আমি যদি এখন শ্রম দেই তাহলে আমি পরে পাব। সত্যি কথা বলে আমরা বেশির ভাগ মানুষই সুখি কিন্তু যখনি আরেকজনকে আমাদের থেকে সুখি ভাবী তখনি আমরা অসুখী হই। একটা জিনিশ মনে রাখতে হবে হয়তবা আমরা বাইরে থেকে যাকে দেখে সুখি ভাবী সে আসলে সুখী নাও হতে পারে। প্লিজ এই চিন্তা টা আমাদের মাথা থেকে ঝেরে ফেলতে হবে। আমার সুখ আমার কাছে ।কার কি আছে আমার কি নাই এইটা নিয়ে চিন্তা করলে হবে না। আমার যা আছে আমি তাই নিয়েই সুখি কারন আমার থেকে অনেকের যেমন বেশি আছে তেমনি আবার অনেকের আমার থেকে কম ও আছে। 

পরিশেষে আমাদের সমাজে চলতে গেলে গাড়িতেও চড়তে হবে,রেস্টুরেন্টও খেতে হবে কিন্তু সেটা যেন আমাকে গরীব না করে দেয় মাথায় রাখতে হবে।

জ্ঞানী মানুষদের সংস্পর্শে আসেন  তাদেরকে অনুসরণ করেন। জিবনে যারা বড় হয়েছেন তারাই খুব সিম্পল জীবন যাপন করতেন।


আমি আসলে এইভাবে কখনো চিন্তা করি নাই। হটাত করে আমার এক স্যার যিনি বুয়েটের ফাস্ট বয় এবং বুয়েটের শিক্ষক তার সহজ সরল জীবন যাপন তার চিন্তা চেতনা তার উদারতা,মহত্ত্ব, বিনয়তা আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এত বড় মানুষ তার মধ্যে এতটুকু অহংকার,ভাব নাই।

সেই তো মানুষ!!!!ছোট থেকে পড়াশোনা করে অনেক কিছু শিখেছি কিন্তু এইটা হয়তবা তাকে না দেখলে শিখতাম না। শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানুষ হওয়া ডিগ্রি লাভ করা না।

আমি আমার এই স্যার কে দেখার আগে যতগুলো বুয়েটের ছাত্রদের (যারা পাস করে বের হয়ে গিয়েছে) দেখা পেয়েছিলাম তারা এত বেশি অহংকারী আর দাম্ভিক ছিল যে বুয়েট নাম শুনলে ধারনা করে নিতাম সে নিসচয়ই অহংকারী আর নিজখেয়ালি (সন্মান দিয়েই বললাম না হয় স্বার্থপর বলতাম)।